Done

To translate and read this site in your own language Click here. Google Translate.

অবশেষে ধরা পড়লেন সোহেল রানা

  • Share on Facebook
  • রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাকে গতকাল যশোরের বেনাপোল সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের পর হেলিকপ�

রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাকে গতকাল যশোরের বেনাপোল সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের পর হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় আনা হয়
ছবি: এহসান-উদ-দৌলা
ধসে পড়া ভবন রানা প্লাজার মালিক ও সাভার পৌর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল রানাকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গতকাল রোববার দুপুরে যশোরের বেনাপোল থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে সহযোগিতা করার অভিযোগে শাহ আলম ও অনীল কুমার নামের আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র‌্যাব জানায়, রানা বেনাপোল দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। আর তাঁকে আশ্রয় দিয়ে পালাতে সহায়তা করছিলেন শাহ আলম ও অনীল। রানার কাছ ফেনসিডিল, কাপড়চোপড়সহ একটি ব্রিফকেস পাওয়া যায়।
গতকাল বেলা সোয়া তিনটার দিকে স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক সাভারে ভবনধসের উদ্ধার তৎপরতার কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকক্ষের মাইকে রানাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে প্রথম ঘোষণা দেন। তখন উপস্থিত উদ্ধারকর্মী ও জনতা ‘ফাঁসি’ ‘ফাঁসি’ বলে স্লোগান দিতে থাকে।
পুলিশ জানায়, ভবনধসের ঘটনায় রানাসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে সাভার থানায়। একটি মামলা করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), অন্যটি সাভার থানার পুলিশ। এ মামলায় ইতিমধ্যে পোশাক কারখানার তিন মালিক ও পৌরসভার দুজন প্রকৌশলীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রানাকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
গ্রেপ্তারের পরপরই রানাসহ তিনজনকে র‌্যাবের হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় আনা হয়। হেলিকপ্টারটি গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দরে নামে। সেখান থেকে তাঁদের উত্তরায় র‌্যাব সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে র‌্যাব।
সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান বলেন, গোপন সূত্রে র‌্যাব জানতে পারে, সোহেল রানা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার জন্য বেনাপোল সীমান্তে অবস্থান করছেন। তাৎক্ষণিকভাবে র‌্যাবের সদস্যরা হেলিকপ্টার নিয়ে যশোরে চলে যান। বেনাপোলের বলফিল্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মহাপরিচালক বলেন, রানা প্লাজায় পাঁচটি পোশাক কারখানা ছিল। ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলেও মালিক সোহেল রানা শ্রমিকদের কাজ করতে বাধ্য করেছিলেন। এ ঘটনার জন্য সোহেল রানা দায়ী।
কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি সোহেল রানাকে প্রশ্রয় দিয়েছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মহাপরিচালক বলেন, কেউ যদি তাঁকে প্রশ্রয় দিতেন, তাহলে তিনি এক জায়গাতেই থাকতেন।
মহাপরিচালক বলেন, সোহেল রানার বিরুদ্ধে সাভার থানায় ইমারত আইনে মামলা হয়েছে। ঢাকা জেলার গোয়েন্দা পুলিশ মামলার তদন্ত করছে। তা ছাড়া তাঁর কাছ থেকে ফেনসিডিল উদ্ধার হওয়ায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনেও মামলা হবে।
অভিযান: যশোর প্রতিনিধি জানান, সীমান্ত দিয়ে সোহেল রানা ভারতে পালিয়ে যেতে পারেন, এমন তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাবের ১৫ সদস্যের একটি দলকে সাদা পোশাকে নজরদারি করার জন্য বেনাপোলে পাঠানো হয়। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর গতকাল বেলা দেড়টার দিকে অভিযান চালানো হয়। এর আগে বেনোপোল ইমিগ্রেশন, পটুয়াখালী সীমান্তসহ বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চৌকি বসানো হয়। গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত যানবাহনে তল্লাশি চালানো হয়।
র‌্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান লে. কর্নেল জিয়াউল আহসান সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার দিন সোহেল রানা ভবনের নিচতলার পূর্ব দিকে তাঁর কার্যালয়ে ছিলেন। তাঁর সঙ্গে আরও পাঁচজন ছিলেন। ভবনধসের পর তিনিসহ পাঁচজনই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েন। একপর্যায়ে একটি ফাঁকা জায়গা দিয়ে স্থানীয় কয়েকজনকে দেখতে পেয়ে সাহায্যের আবেদন করেন তাঁরা। তখন লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে সাভারের একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। দুই ঘণ্টা সেখানে চিকিৎসা নিয়ে তিনি বের হয়ে আসেন। জিয়াউল আহসান বলেন, হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার পর সোহেল রানা মোহাম্মদপুরে শামীম নামের এক বন্ধুর বাসায় ওঠেন। সেখানে রাতে অবস্থান করেন। পরদিন বৃহস্পতিবার তিনি মানিকগঞ্জে আফজাল নামের আরেক বন্ধুর বাসায় চলে যান। শুক্রবার রাত পর্যন্ত মানিকগঞ্জে ছিলেন। ওই রাতেই পদ্মা নদী পার হয়ে যান ফরিদপুরে অনীল কুমারের বাসায়। সেখানে এক দিন ছিলেন তিনি। পরদিন শনিবার রাতে সোহেল রানাকে যশোরের ঝিকড়গাছায় শাহ আলমের কাছে নিয়ে যান অনীল। শাহ আলম সেখান থেকে রানাকে বেনাপোলের বলফিল্ড এলাকায় তাঁর বাসায় নিয়ে যান।
জিয়াউল আহসান বলেন, ওই বাসায় গিয়ে দেখা যায়, ভেতরের একটি কক্ষে প্যান্ট-শার্ট পড়ে টেলিভিশন দেখছিলেন সোহেল রানা। গতকাল রোববারই তিনি ভারতে চলে যেতে চেয়েছিলেন।
অনীল ও শাহ আলমের ব্যাপারে জানতে চাইলে জিয়াউল আহসান বলেন, তাঁরা আসলে বিদেশে মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত। সোহেলকে ভারতে পালানোর জন্য তাঁরাই সব বন্দোবস্ত করেছিলেন।
তবে শাহ আলম বলেন, ‘রানা আমার দূরসম্পর্কের আত্মীয়। শনিবার রাত ১১টার দিকে আমি রানাকে আমার বাসায় নিয়ে আসি।’
স্থানীয় র‌্যাব কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে প্রথম আলোর যশোর প্রতিনিধি জানান, শনিবার রাতে রানা ফরিদপুরের কানাইপুর গ্রামের হাসান নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে ছিলেন। গ্রেপ্তার হওয়া অনীল সেখান থেকে রানাকে শাহ আলমের কাছে নিয়ে যান। শাহ আলম ওই বাসায় ভাড়া থাকেন। তিনি বেনাপোলে ফার্নিচারের ব্যবসা করেন বলে জানা গেছে।
রানার বক্তব্য: গতকাল র‌্যাবের সদর দপ্তরে তিনজনকে আনার পর সোহেল রানা বলেন, তিনি সাভার পৌর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। আগে ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ঘটনার দিন আহত হয়ে তিনি একটি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নেওয়ার পর পালিয়ে যান।
ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শ্রমিকদের কাজ করতে বাধ্য করার ব্যাপারে প্রশ্ন করলে সোহেল রানা বলেন, পোশাক কারখানার মালিকেরাই তাঁকে ভবন খোলা রাখতে বাধ্য করেছিলেন। কারখানার মালিকেরা বলেছিলেন, কাজ বন্ধ থাকলে তাঁদের শিপমেন্ট (পণ্য পাঠানোর আদেশ) বাতিল হয়ে যাবে। তিনি দাবি করেন, ভারী যন্ত্রপাতি বসানোর কারণে ভবনের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ছে—এ ব্যাপারে তিনি বেশ কয়েকবার কারখানার মালিকদের লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন।
সাংসদ মুরাদ জংয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার ব্যাপারে জানতে চাইলে রানা র‌্যাবকে বলেন, তিনি দল করেন, সে কারণে সাংসদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা আছে। ঘটনার পরও তিনি সাংসদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
এক মালিকের অভিযোগ: ইথার টেক্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. আনিসুর রহমান গতকাল রাতে বিজিএমইএ ভবনে আত্মসমর্পণের আগে একটি লিখিত বক্তব্য প্রথম আলোকে দেন। এতে তিনি বলেন, ‘আমরা যখন ভবন ভাড়ার চুক্তি করি, তখন মালিক আমাদের ছয়তলার অনুমোদনপত্র দেন। পরে তা লঙ্ঘন করে ভবনটি নয়তলা করা হয়। এর বিরুদ্ধে আমরা বরাবরই অভিযোগ জানাই।’ তিনি আরও বলেন, ইথার টেক্স ও ফ্যানটমের তিনটি ফ্লোরের জেনারেটর বেজমেন্টে স্থাপন করা হয়। তবে নিউ ওয়েভ তৃতীয়, সপ্তম ও অষ্টম তলায় পৃথকভাবে তিনটি জেনারেটর বসাতে ভবনের মালিককে রাজি করান। এ বিষয়েও অভিযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু সেটা আমলে নেননি তাঁরা। সোহেল রানা তাঁর জনপ্রিয়তা প্রদর্শনের জন্য বিভিন্ন কারণে কারখানা থেকে শ্রমিকদের মিছিলে অংশ নিতে বাধ্য করতেন। অনৈতিক চাঁদা আদায় করতেন। আপত্তি জানালে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ব্যবসা ও জানমালের ক্ষতি করার হুমকি দিতেন।

No comments:

Post a Comment